সোমবার, ১৬ই জুন ২০২৫, ১লা আষাঢ় ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল dailyvobnews@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা টোল আদায়
  • চট্টগ্রামে এক দিনে ৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত
  • ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান ও হুতির যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
  • স্টারলিংক চালুর ঘোষণা ইলন মাস্কের
  • সব বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
  • ক্রিকেট দুনিয়া প্রশংসায় ভাসাচ্ছে প্রোটিয়াদের
  • ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ১০
  • গোপন সার্জারির কথা স্বীকার করলেন মেগান ফ্ক্স
  • দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ
  • ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের তাণ্ডব

উচ্চশিক্ষা অর্জন ও বেকারত্ব হ্রাসে সমন্বয় জরুরি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত:
১৫ জুন ২০২৫, ১৭:০৬

২০২৪ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। ২০২৩ সালে এসএসসি ও সমমানে পাসের হার ছিল ৮০.৩৯ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। সেই হিসাবে এ বছর পাসের হার বেড়েছে ২.৬৫ শতাংশ। আর জিপিএ ৫ কমেছে এক হাজার ৪৪৯ জন। তবে ২০২২ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিল দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। করোনা মহামারিতে কম বিষয়ে ও কম নম্বরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ ৫ দুটিই হু হু করে বেড়েছিল। তবে ২০২৪ সালে গত বছরের তুলনায় পাসের হার সামান্য বেড়েছে। কিন্তু জিপিএ ৫ কিছুটা কমেছে। তাই এবারের ফল স্বাভাবিক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এভাবে ‘এ+’ পাওয়ার সংখ্যা প্রশংসনীয়। কিন্তু বাস্তবে গুণগতমান শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বাড়ছে কিনা, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এভারেজ শিক্ষার্থীদের এভাবে ‘এ+’ পাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে কিছুটা অহঙ্কারী মনোভাব তৈরি হয়। কিন্তু সবাই তো আর উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে না। আর ‘এ+’ পাওয়া কোনো ছেলে তো কৃষিকাজ বা অন্যান্য সাধারণ কাজ করতে চাইবে না। তাই উচ্চশিক্ষার বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময় আসছে। শুধু জিপিএ ৫-এর সংখ্যা না বাড়িয়ে কীভাবে দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি করা যায়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখের বিষয় হলো উচ্চশিক্ষায় কতজন ভর্তি হতে পারবে? কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ আসন সংখ্যা রয়েছে, তাতে সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় সুযোগ পাচ্ছে না। আসন সংখ্যা সীমিত। যে পরিমাণ শিক্ষার্থী পাস করেছে, সেই পরিমাণ আসন সংখ্যা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই। তাই অনেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে। আমরা সবাইকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে দিতে পারছি না। তবে সবাইকে উচ্চশিক্ষায় আসতে হবে, বিষয়টা এ রকম নয়। কারণ সবাইকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। সবাই যদি উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয়, তা হলে কিছু ক্ষেত্রে চাকরিতে লোক পাওয়া যাবে না। উচিত হবে শিক্ষাকে বহুমুখী করা। বর্তমান সরকারকে এসব ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে।

যেমন-কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা সম্পূর্ণভাবে নিরসন করতে হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে রোবট, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং ইন্টারনেট অব থিংসের মতো প্রযুক্তির সমাজে প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। দেখুন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কারিগরি শিক্ষা। যেমন-জার্মানিতে ৭৩, জাপানে ৬৬, সিঙ্গাপুরে ৬৫, অস্ট্রেলিয়ায় ৬০, চীনে ৫৫, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ শতাংশ মানুষ কারিগরি শিক্ষায় জড়িত ও দক্ষ। তাই বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন হতে হবে।

তা হলে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড বলে যে কথা, সেটি বাস্তবায়ন হবে। অর্থাৎ আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা কমে আসবে। তা দেশের টেকসই উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। সবাইকে উচ্চশিক্ষায় না গিয়ে কারিগরি শিক্ষায় পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে-যেন অনেক শিক্ষার্থী এই শিক্ষায় পড়াশোনা করতে আগ্রহী হয়। প্রয়োজনে এই ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া উচিত বলে মনে করছি। আমরা উচ্চশিক্ষার হার বাড়িয়েছি। অথচ ভারত বা শ্রীলংকা থেকে আমাদের কর্মী নিয়োগ দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ সফট স্কিলসম্পন্ন লোকের সংখ্যা কম। তাই শিল্প প্রতিষ্ঠান দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে ভুগছে।

আমাদের শিক্ষার্থীকে সফট স্কিল বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। তবে এ সংখ্যা প্রশ্নবিদ্ধ।

বাস্তবে বেকারের সংখ্যা অনেক। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত বেকার-যারা এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করেছে-এমন বেকারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। অ্যাকশন এইডের (২০১৯) গবেষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটের ৪৬ শতাংশের বেশিই বেকার। অন্যদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের দুটি জরিপ অনুযায়ী দেশের স্নাতক (অনার্স) ডিগ্রিধারীদের ৩৭ থেকে ৬৬ শতাংশ বেকার। তাই বেকার কমাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। বেকারের সংখ্যা হ্রাস করতে এসব শিক্ষার্থীকে কীভাবে কারিগরি শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করা যায়- এ বিষয়ে যদি সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, তা হলে সেটি বেশি কার্যকর হবে।

আমাদের দেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ বা অন্যান্য সাপোর্ট সিস্টেম বেশি গড়ে ওঠেনি। যা আছে, তা অপ্রতুল। তাই উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে-যাতে তারা সহজেই আর্থিক ঋণ ও অনুমতি পায়। অনুমতি পেতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৬৮তম। তাই এ সূচকে আমাদের আরও উন্নতি ঘটাতে হবে। বিভিন্ন দপ্তরে নাগরিক সেবা পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে আনতে হবে। তা হলে বেকারত্ব দূর হবে। উচ্চশিক্ষায় উন্নতির জন্য গবেষণায় আর্থিক প্রণোদনা বৃদ্ধি করতে হবে-যাতে শিক্ষকরা বেশি বেশি গবেষণা করতে আগ্রহী হন। কারণ আমাদের উচ্চশিক্ষায় গবেষণার মান ও গবেষণার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণা তেমন হয় না। শিক্ষকরা নানাবিধ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, কেউ কেউ নোংরা রাজনীতিতে লিপ্ত হয়ে যান। এসব উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর।

গবেষণার সংখ্যা ও গবেষণার মান উন্নয়ন করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বেশি করে নজর দিতে হবে। শুধু নজর দিলেই হবে না, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। উচ্চশিক্ষা উন্নয়নের জন্য মূলে কাজ করতে হবে। মূল মানে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার আরও উন্নয়ন হওয়া এবং শিক্ষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা উচিত। তা হলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করতে আগ্রহী হবে। এতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করা না হলে যে উচ্চশিক্ষায় গলদ থেকেই যাবে, এতে সন্দেহ নেই। তাই সরকারের উচিত প্রাথমিক পর্যায়ে কীভাবে পরিবর্তন আনা যায়, সেটি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন আগের তুলনায় সহজলভ্য বলে কেউ কেউ মনে করছেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখো শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি করে বের হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ৮ লাখ বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট বা স্নাতক ডিগ্রিধারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। কিন্তু সেই তুলনায় চাকরির ক্ষেত্র বাড়েনি।

তাই উচ্চ শিক্ষা-বেকারত্ব হ্রাসে সমন্বয় জরুরি। প্রয়োজনে তরুণ প্রজন্মের অনেককে টেকনিক্যাল শিক্ষায় পড়াশোনা করতে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে। চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করে এখন অনেক শিক্ষার্থী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি করেন। এমনটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ প্রশাসন ক্যাডারকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তাই সবাই এখন ওই ক্যাডারে যেতে চান। এ জন্য ক্যাডারবৈষম্য কমানো আবশ্যক। সব পেশা ও ক্যাডারে সুযোগ-সুবিধায় ভারসাম্য আনা চাই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্যারিয়ার উপযোগী ক্ষেত্র গড়ে তুলতে ও নানামুখী কর্মশালা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণানির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চীন ও ভারতের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স সম্পূর্ণভাবে গবেষণাভিত্তিক করা যেতে পারে। ভারতের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শুধু মাস্টার্স, এমফিল এবং পিএইচডির শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যেতে পারে। আর স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রির জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় ভর্তির বিষয়ে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর