প্রকাশিত:
১৬ জুন ২০২৫, ১৬:৫৭
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে এই নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আগামী ২৪ জুন এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশের এই বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলা-ইংরেজি দুটি দৈনিক পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। গত বছর ১৭ ও ২৭ অক্টোবর এই তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। সেই পরোয়ানা তামিল (বাস্তবায়ন) সংক্রান্ত শুনানিতে সোমবার গ্রেপ্তার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
আদালতে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, গাজী মনোয়ার হোসেন তামিমসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা।
পরোয়ানা বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসা ও অন্যান্য স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পেরেছে, এই দুই আসামি পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার করা গেলে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হবে।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর ট্র্যাইব্যুনাল কার্যবিধির ৩১ বিধি অনুসারে এ বিষয়ে আদেশের আরজি জানালে ট্রাইব্যুনাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আদেশ দেন।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকেও এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে গ্রেপ্তার করা না গেলে বা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও হাজির না হলে কী হবে, জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁদের গ্রেপ্তার করা না গেলে বা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও আদালতে হাজির না হলে আদালত আইন অনুযায়ী পরবর্তী কারর্যধারায় অগ্রসর হবেন এবং তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালিত হবে। আসামি দুজন ভারতে পলাতক আছেন বলে পুলিশ আমাদের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে।’
প্রসিকিউশনের দেওয়া তথ্যমতে, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৪ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। প্রায় সাতমাসে তদন্ত শেষ করে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়, হত্যা, হত্যা চেষ্টা, পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উষ্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন মামলার পাঁচ অভিযোগই আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেদিন ট্র্যাইব্যুনালের এই কার্যক্রম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
মন্তব্য করুন: